বরেন্দ্র অঞ্চলের অধিকাংশ জেলায় নারীর অধিকার, মজুরি বৈষম্য

বরেন্দ্র অঞ্চলের অধিকাংশ জেলায় নারীর অধিকার, মজুরি বৈষম্য

বরেন্দ্র অঞ্চলের অধিকাংশ জেলায় নারীর অধিকার, মজুরি বৈষম্য
বরেন্দ্র অঞ্চলের অধিকাংশ জেলায় নারীর অধিকার, মজুরি বৈষম্য

অনলাইন ডেস্ক: রাজশাহীর গোদাগাড়ীসহ বরেন্দ্র অঞ্চলের অধিকাংশ জেলায় নারীর অধিকার, মজুরি বৈষম্য এবং নারী নির্যাতন এখনো বন্ধ হয়নি। নারী নির্যাতন বন্ধ, নারীর অধিকার, মজুরিসহ নানা বিষয়ে সম-অধিকার নিয়ে সভা-সেমিনার হলেও বাস্তবে নারী শ্রমিকরা যুগের পর যুগ অবহেলিত আছেন। জীবন-জীবিকার তাগিদে পুরুষ শ্রমিকদের সঙ্গে মাঠে-ময়দানে হাড় ভাঙা পরিশ্রম করলেও মিলছে না সমান মজুরি। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে পিছিয়ে আছেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারীরা।

রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় নারী শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা এখনো নির্যাতনের শিকারসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন। সেই সঙ্গে এখনো রয়েছে মজুরি বৈষম্যের চিত্র। নারীরা তুলে ধরেন তাদের কষ্টের কথা।

তাদের অভিযোগ, তারা মাঠ-ঘাট, ময়দানে পুরুষদের সঙ্গে সমানভাবে কাজ করলেও নারীরা সমান মজুরি থেকে বঞ্চিত। নারীদের সুরক্ষা ও ন্যাঘ্য অধিকার (মজুরির) নিয়ে প্রতিবাদ করেও কোনোভাবেই আশানুরূপ ফল পাচ্ছেন না বলে জানান একাধিক নারী শ্রমিক।

তারা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, জীবন-জীবিকার তাগিদে তারা কম মূল্যে মাঠে-ঘাটে কাজ করেই যাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, তারা পুরুষ শ্রমিকদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করছেন। স্হানীয়ভাবে এক দিনে পুরুষ শ্রমিকের মজুরি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। কিন্তু নারী সমান কাজ করে মজুরি পাচ্ছেন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। বর্তমানে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় নারী শ্রমিকেরা পাচ্ছেন ৩০০ টাকা, পুরুষেরা পাচ্ছেন ৪৫০ টাকা। নারী শ্রমিকরা বোরো, আউশ, আমন চারা রোপণসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফসলের পরিচর্যা, মাটি কাটা, চাতাল, ইটভাটায় ও রাজমিস্ত্রির কাজও করছেন।

মোহনপুর উপজেলায় জামতলার নারী শ্রমিক মায়া রানী বলেন, জমিতে ধান রোপণ ও কাটা-মাড়াইসহ বিভিন্ন কৃষি কাজ দীর্ঘদিন ধরে করে আসছি। জমিতে কাজে গিয়ে কত বৃষ্টি-বাদলসহ বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। কিন্তু সে তুলনায় পুরুষদের চেয়ে আমাদের মজুরি কম।

জাতীয় আদিবাসী পরিষদ রাজশাহী জেলা সভাপতি বিমল চন্দ্র রাজোয়াড় জানান, বরেন্দ্র অঞ্চলের হাজার হাজার একর জমিতে বিভিন্ন উন্নত জাতের ফসল উত্পাদন হচ্ছে। যা এ এলাকার খাদ্যের চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত থাকে। আর এই খাদ্য ভান্ডার বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষিকাজে পুরুষ শ্রমিকদের পাশাপাশি নারী শ্রমিকরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।

তিনি বলেন, গোদাগাড়ী উপজেলায় এখন প্রায় ১২ হাজারের বেশি নারী কৃষি শ্রমিক রয়েছেন। নারী নেত্রী সুষ্মিতা টুডু বলেন, এলাকার ক্ষুদ্র নারী গোষ্ঠীর নারী শ্রমিকরা কৃষিকাজে অভাবনীয় সাফল্য এনেছেন। অন্যের জমিতে কাজ করার পাশাপাশি নিজেরাই দক্ষতার সঙ্গে ফসল চাষ করে সফল হচ্ছেন। রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চল, গোদাগাড়ী, তানোর, মোহনপুর, নাচোল, নিয়ামতপুর, ধামইরহাট, গোমস্তাপুর, মহাদেবপুর, মান্দা উপজেলাসহ এ এলাকায় বসবাসকারী প্রায় ৩১ হাজারের বেশি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নারী কৃষিকাজে অগ্রণী ভূমিকা রাখছেন। এই নারীরা পুরুষের সমপরিমাণ কাজ করলেও মজুরি বৈষম্যের শিকার হয়ে থাকেন।

এ প্রসঙ্গে নারী নেত্রী কল্পনা তির্কী বলেন, এ অঞ্চলের ক্ষুদ্র নারী গোষ্ঠীর লোকজন জঙ্গল পরিষ্কার করে সব জমিকে ফসলি জমিতে পরিণত করেছেন। ধানসহ ফসল উত্পাদনে এসব শ্রমিকদের অবদান রয়েছে সবচেয়ে বেশি। তিনি জানান, নারীদের কৃষি শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানসহ ন্যাঘ্য মজুরি নিশ্চিত করতে হবে।

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply